নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বনানী এলাকার প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড ও ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ছয় ধরনের অনিয়ম পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লাইসেন্সবিহীনভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম পরিচালনা করা যা নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন-২০০২-এর ধারা ১৮(১) অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ, মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহার করা, সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মেডিকেল চেকআপ সেন্টারের লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও বিদেশগামী যাত্রীদের পরীক্ষার সনদ প্রদান করা, হাসপাতালের লাইসেন্স ছাড়া জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চালু রাখা এবং অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন জনবল দিয়ে ল্যাবরেটরিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং রোগীদের ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারিত করার অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি দল প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনকালে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণের হয়রানি, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ এবং লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
তবে, রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা এবং কার্যক্রম বন্ধ করার কারণে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ আদালতে রিট পিটিশন (৬৫৬১/২০২৩) দায়ের করে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা ও কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে আপিল আবেদন করা হয়। আদালত রুলটি খারিজের জন্য তারিখ ঘোষণা করলে সময়ের জন্য আবেদন করে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর সম্পূরক জবাব দায়েরের পর আদালত মূল কোর্টের জন্য নির্দেশনা দেন এবং সাত দিনের মধ্যে প্রার্থীর আবেদন নিষ্পত্তি করতে রুল জারি করেন। এরপর অন্য আদালতে পুনরায় রিট পিটিশন দায়ের করে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনার কারণে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য দিচ্ছে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ। সারাদেশে যে সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধ ও লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে সেগুলোর বিষয়ে মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক আইন অনুযায়ী চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়, যাতে জনগণ হয়রানির স্বীকার না হয়। কিন্তু চলমান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য উপস্থাপন করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড ও ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলমান অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দেয় অধিদপ্তর। তবে, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।