মনসুর আলম মুন্না, কক্সবাজার : কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকার ইয়াবা মাফিয়া কাসেম ,তাহের ও ঢাকাইয়া কানা মোশারফ এখনও অধরা, গত কয়েকদিন ধরে আলোচনা সমালোচনা চলছিল ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক জয়নাল ও মোশাররফকে ঘিরে । রাতে ট্রলারে করে নিয়ে আসা প্রায় তিন লাখ ইয়াবার চালান একটি গোপন সংবাদ পাই র্যাব ১৫ এর একটি গোয়েন্দা দল । ২ ধরে কঠোর নজরদারি রাখার পর দুটি ট্রলারে করে নিয়ে আসা ইয়াবাগুলো নিয়ে লাপাত্তা কাসেমের বড় ভাই তাহের। এখনও পর্যন্ত এই ৩০ কার্ডের মধ্যে ২৮ কার্ড ইয়াবা নিয়ে আড়াল হয়ে গেছে তাহের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গত ২৭ আগষ্ট -২০২৩ ইং তারিখে দুটি ট্রলার থেকে ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক হয় জয়নাল ও মোশাররফ।
অনুসন্ধানে জানা যায় যে, আটক হওয়া জয়নাল , কাসেম ও তাহেরের ইয়াবা চালান ট্রলারে করে নিয়ে আসতে দেড় লক্ষ টাকার কন্টাক্ট নেয়। ঐ সুবাধে তাহেরের ট্রলার ভর্তি ইয়াবা নিয়ে আসা ট্রলারটি সাগরের মাঝপথে নষ্ট হয়ে গেলে জয়নালকে আরেকটি বোটে করে কন্টাক্টে ইয়াবা নিয়ে আসতে পাঠাই কাসেম,ও কাসেমের স্ত্রী জিয়াছমিন। এর ভিতরে অভিযান টের পেয়ে তাহের পলাতক হলেও জয়নাল ও মোশাররফ নামের ২ জনকে ২০ হাজার পিচ ইয়াবাসহ আটক করে র্যাব
১৫ একটি আভিযানিক দল। আটককৃত জয়নাল ও মোশাররফ জানান, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মোশারফ আলম ওরফে কানা মোশারফ ইয়াবার বড় চালান নিয়ে পালিয়ে যায়। আটককৃতরা আরো জানান, তিন মাসে বাসে করে কানা মোশারফের কাছে ৫ টি চালান দিয়ে আসি। এর বিনিময়ে ১ লাখ টাকা দেন মোশারফ আলম ওরফে কানা মোশারফ। ঘটনার সু্ত্রে জানতে পারি যে, কাসেম ও তাহের দুজনই পুরাতন রোহিঙ্গা, একসময় তারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলও এখন কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড উত্তর নুনিয়ারছড়ায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বর্তমান ওয়ার্ড কমিশনার মিজানুর রহমানের মাধ্যমে ভোটার হয় । কাসেম ও তাহেরের গত পাঁচ বছর আগে নুন আনতে পান্তা ফুরালেও এখন হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে । সম্পদের মাত্রা ফুলে ফেঁপে ওঠেছে। তবে সব ইয়াবা নামের এই ভয়াবহ মাদকের ছোঁয়ায়।
কাসেম গত কয়েক বছর আগে ট্রলারে করে দালালের মাধ্যমে সাগর পাড়ি দিয়ে মালেশিয়া গেলও তেমন কিছু করতে পারেনি । অভাব অনটন যেন লেগেই থাকত পরিবারে । তবে মালিশিয়া থেকে কাসেমকে ফেরত আনতে ৭০ হাজার টাকা বাংলাদেশ থেকে পাঠিয়েছিল তার পরিবার । পরিশেষে কাসেম দেশে আসার বছর দুয়েক পর চালচলন এবং অর্থনৈতিক চাঙ্গা হয়ে এলাকায় নেতৃত্ব দেয়ার মতো একটি সামাজিক সংগঠনের সভাপতির পদও ভাগিয়ে নেন টাকার বিনিময়ে। এই টাকা এবং এই সম্পদের রহস্য বেরিয়ে গেল জয়নাল ও মোশাররফ ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ার পর।
তাহেরও কাসেমের নেতৃত্বে রয়েছে কাসেমের মামা শ্বশুর জয়ানাল ও একাধিক লালিত পালিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নেতৃত্বে উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকায় রাতে কিংবা দিনে চলে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। তাহের ট্রলারে করে সাগর দিয়ে নিয়ে আসা যত ইয়াবার চালান সবগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। আর অন্যদিকে কাসেম এই জেলে পল্লীর কিছু জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীকে বহনকারী হিসেবে কিছু টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করে কৌশলে কোটি কোটি টাকার ইয়াবাগুলো পাচার করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কাসেমের রয়েছে একাধিক সম্পত্তি, দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকায় কাশেমের অবৈধ টাকায় অর্জিত সম্পদ প্রাই কোটি টাকার কাছাকাছি। আর কক্সবাজার লিংরোড বেসিক এলাকায় প্রায়ই দুই কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে অঢল সম্পদের মালিক। স্ত্রী সন্তান ও শশুর বাড়ীর লোকজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকেও কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। যার তথ্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।২ ইয়াবাসহ আটক হওয়া জয়নালের স্ত্রীর এক লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসে তাহের ও কাসেমের ইয়াবা সংক্রান্ত নানা ফিরিস্তি। জয়নাল একজন দিন মজুর তার ঘরে দিনে এনে দিনে খাই। পাঁচটি মেয়ে সন্তান নিয়ে কোন রকম কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করে জীবন যাপন করে বেঁচে আছি।
হঠাৎ আমার স্বামী জয়নাল ও পাশ্ববর্তী মোশারফকে দিয়ে কাসেম ও তাহের এবং ঢাকাইয়া মোশারফ আলম ওরফে কানা মোশারফ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ইয়াবার চালান আনতে পাঠাই সাগরে । ধরা খেলেও যেন কাসেম, তাহের ও ঢাকাইয়া মোশারফ আলম ওরফে কানা মোশারফের নাম যেন গোপন রাখে তাও প্রতিজ্ঞা করাই। সেই সাথে কারাগারে গেলেও ছাড়িয়ে আনার আশ্বাস দেয় কাসেম ও কানা মোশারফ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত নির্যাতনের পরেও কাসেম ও তাহেরের নাম মূখ থেকে একবারের জন্যও আনেনি। তবে এসব বিষয়ে এখন মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি। কারন কাসেম, তাহের ও ঢাকাইয়া মোশারফ আলম ওরফে কানা মোশারফ। আমার স্বামীকে জামিন করার আশ্বাস দিয়ে এখন তাসম্পূর্ণ অশ্বীকার করছেন। তাই সত্য কথা বলে দিতে বাধ্য হলাম। ঐসময় অভিযানের সন্দেহে ট্রলারে করে আনতে যাওয়া আরেকটা বোটে করে তাহের ২৮ কার্ড ইয়াবা নিয়ে সাগর দিয়ে চলে যায় ১ নং ওয়ার্ড সমিতিপাড়ার দিকে ।
চরপাড়া দিয়ে খালাস করার কথাও জানতে পারি। ঠিক গভীর রাতে ইয়াবার চালান খালাস করতে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের হাতে ধরা খেলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছাড় পাই । তবে এইসব ইয়াবাগুলো কোথায় পাছার করছে এখন তা জানতে পারছিনা। এবিষয়ে স্থানীয় জামাল নামের একজন বলেন , গত দেড় বছর আগে কাসেম ও তাহেরের ইয়াবা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। এই মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারের ছিলাম। তাঁরা এলাকাটিকে ইয়াবার স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে সাথে আসে ঢাকাইয়া কানা মোশারফও । তাঁরা এখন টাকার বিনিময়ে এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করছে। তারা ইয়াবার টাকা নিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছে এবং পুরো দেশ জুড়েই ইয়াবার বড় বড় চালান পৌঁছে দিচ্ছে তার লালিত-পালিত ইয়াবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। তবে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুললে নেমে আসে হয়রানি । এই ভয়ে হয়তো অনেকেই মুখ খুলবে না। তবে কাসেম ও তাহের উত্তর নুনিয়ারছড়ার এখন শিষ্য ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঢাকাইয়া কানা মোশারফের দখলে । তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে তাঁরা এখনও পর্যন্ত ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা পাশ্ববর্তী সমাজপতি নুরুল হক বলেন, কাসেম, তাহের ও ঢাকাইয়া মোশারফ আলম ওরফে কানা মোশারফ বর্তমানে এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী, তারা এলাকার যুবকদের ধ্বংস করেছে। তাদের কারনে বহু পরিবার স্বামী হারা হয়েছে। তাদের লোভে পড়ে অনেকেই জেলে গেছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এখনও তারা ইয়াবা মাফিয়া অধরা । তবে তাদের সাথে আরও রাঘব বোয়াল রয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে কাসেমের মামা শ্বশুর জয়নাল ইয়াবা সংক্রান্ত লেনদেনের বিষয়েও নানা সমস্যা সমাধানের কথা জানিয়েছে। জয়নাল নিজেকে এলাকার সভাপতি এবং এলাকার বড় মাপের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে অনুসন্ধানস্থ এলাকায় অবরুদ্ধ করতে নিয়ে আসা হয়েছিল তার একাধিক মাদকের কমিশন বাহিনী। তবে কৌশলে ঐ স্থান থেকে অনুসন্ধানি টিম বেরিয়ে আসে।
এদিকে ইয়াবা সম্রাট কাসেম ও তার স্ত্রী এমন নিউজ না করতে বিভিন্ন সাংবাদিক ও পত্রিকা অফিসে গিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রলোভন লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কাসেম ও তাহেরের পরিবার ইয়াবা নিয়ে নিউজের বিষয় নিয়েও গত কয়েকদিন আগে কক্সবাজারের একটি পতিতালয় হোটেলে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে তিন থেকে চারজন স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। তবে ঐ সংবাদ সম্মেলনেও তাঁরা কোন বক্তব্য দিতে পারিনি। পিছনে সাইনবোর্ড লাগিয়ে একটি কাগজ ধরে ছবি নিয়ে ঐ সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটায়।
বিষয়টি নিয়ে কাসেম নিজেকে বার বার দাবি করেন, নিউজ করলেও আমার এবিষয়ে কিছু আসে যায়না। সমাজের সভাপতি এমনিতেই হয়নি। এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করব। প্রয়োজনে সাংবাদিক এলাকায় গেলে আত্বীয় স্বজনের মাধ্যমে মহিলা দিয়ে ধরে শায়েস্তা করব। তবে আমার বিরুদ্ধে টিভি চ্যানেলসহ যত পত্রিকা রয়েছে, সবগুলো ছেড়ে দিলেও কিছু হবেনা। কাসেমের স্ত্রী কখনও স্ট্রুক করার অভিনয় করে, কখনও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যাওয়ার কথা বলে , আবার নিজেদের বাঙালি বলে ঘুরে বেড়ায়। আবার নিজেদের ঘরে অভাব অনটন লেগে থাকার আকুতি জানায় । তবে বিষয়টির চিত্র সম্পুর্ন উল্টে। ইতিমধ্যেই কাসেমের শশুর বাড়ির লোকজনোও মরিয়া এইসব বিষয়ে ধামাচাপা দিতে। তারা বিভিন্ন স্থানীয় নেতাদের ব্যবহার করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কায়সার হামিদ বলেন, মাত্র কয়েকদিন হলো এসেছি, নুনিয়ারছড়া এলাকাটি সম্পর্কে শুনেছি, কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বেশী বেপরোয়া ঐ এলাকায়। তবে এবিষয়ে ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে যতাযত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।