• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

কেরানীগঞ্জে ৫ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী উদ্ধার, ভুয়া এতিমখানার নামে তাদের দিয়ে চাঁদা উত্তোলন, গ্রেফতার ৪

বনি আমিন, কেরানীগঞ্জ থেকেঃ / ১৬৭ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩

বনি আমিন, কেরানীগঞ্জ থেকেঃ

কেরানীগঞ্জে ভুয়া এতিমখানার নামে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার করে জনসাধারণের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। ভুক্তভোগী এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে কেরানীগঞ্জের আরশিনগরে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির হোতা ইয়াসিন ওরফে হুজুর ইয়াসিন (৩০), তার স্ত্রী সিমা আক্তার (২৫), মোস্তাকিম (২৮) ও আব্দুর রহমান (৩২) নামে ৪ প্রতারক কে গ্রেফতার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। এসময় সেখান থেকে ৫ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- মিলন ইসলাম রাজু, আলী আজম, জাহিদ হাসান, আবদুল্লাহ, ও মো: হাবিবুল ইসলাম।

শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আমীনুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ, পরিদর্শক (অপারেশন) মুন্সি আশিকুর রহমান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীনুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতরা আরশিনগর এলাকার ফজলুর রহমানের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘ইহসানিয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং’ নাম দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সংগ্রহ করেন৷ এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বলা হয়, থাকা-খাওয়া ও পড়াশুনা ফ্রি। এখানে আসার পর দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের একরকম বন্দী করে ফেলা হয়। এরপর তাদের দিয়ে রাজধানী সহ আশপাশের এলাকায় ধর্মপ্রাণ ও সহজ সরল লোকের কাছ থেকে ভুয়া এতিমখানার নামে চাঁদা উত্তোলন করা হয়।

তিনি আরও জানান, চাঁদা উত্তোলন করতে যখন একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে কোথাও পাঠানো হয়, তার সঙ্গে সুস্থ স্বাভাবিক একজন লোক দেয়া হয়। ওই লোক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে চাঁদা উত্তোলনের স্পটে নিয়ে যায়, তার দিকে নজর রাখে এবং চাঁদা উত্তোলন শেষ হলে তাকে নিয়ে বাসায় ফিরে। এভাবে তারা মাসে কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করে। এসব টাকা থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে মাসিক দেয়া হয় ৫ হাজার, চাঁদা উত্তোলনের সময় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে যে আনা নেয়া করে তাকে মাসিক দেয়া হয় ৬ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া, খাওয়া- দাওয়া সহ কিছু টাকা মাসিক খরচ হয়। বাকি হোতা ইয়াসিন ও তার লোকজন ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। অনেক সময় সমাজের পদস্থ ও ধনী লোকজনের কাছ থেকে এতিমখানার নামে মোটা অংকের টাকা অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করা হতো।

কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের এ কাজ করতে বাধ্য করা হতো। কেউ প্রতিবাদ করলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করে ঘটনার সত্যতা পায়। শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে আরশিনগরের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই বাসা থেকে ৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চক্রটির হোতা সহ ৪ জনকে গ্রেফতার ও চাঁদা উত্তোলনের নগদ ৫১০০ টাকা, চাঁদা আদায়ের রশিদ, লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিলন ইসলাম রাজু বলেন, ভালো পরিবেশে থাকা- খাওয়া, কোরআন শিখতে পারবো, ভালো খাবার পাবো- এসব বলে শেরপুর থেকে আমাকে এখানে আনা হয়। আসার পর দেখি এখানে কোন পড়াশুনা নাই। প্রতিটা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর কাজ হচ্ছে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদা আদায় করা। আমাকে প্রতিদিন ২০০০ টাকা চাঁদা আদায় করতো হতো। না পারলে বাসায় ফিরলে নির্যাতন করতো। আমি এখানে আসছি দুই মাস। এই দুই মাসে আমি লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উত্তোলন করে তাদের দিয়েছি।

অপর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আলী আজম বলেন, আমাদের অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে প্রতারনা করেছে, ওদের বিচার চাই।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আপাতত পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। স্বজন পাওয়া গেলে তাদের জিম্মায় দেয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...