• বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩২ জনের জামিন বাতিল কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের একদিন পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না: জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে পুলিশ সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর জানাজা পড়ালেন জামায়াত আমির কুষ্টিয়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যান’কে কুপিয়ে জখম বরই দিয়ে ইফতার করা বলা সেই শিল্পমন্ত্রী গ্রেফতার শেরপুরে ধর্ষণ মামলার সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদী গ্রেফতার বরগুনার আমতলীতে বসতবাড়ির চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ কুষ্টিয়ায় কলেজ ছাত্র হত্যা মামলার ৫ আসামি গ্রেপ্তার

টিসিবির ট্রাকসেলে সিন্ডিকেট চক্রের কালো থাবায় দিশেহারা সাধারণ ক্রেতারা

Reporter Name / ২০৫ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩

এম রাসেল সরকার: টিসিবির ট্রাকসেলে সিন্ডিকেটের কালো থাবা পড়েছে। এই চক্রের সদস্যরা লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে তেল- চিনিসহ অন্যান্য পণ্য কিনে তা পাড়া-মহলস্নার মুদি দোকানে বিক্রি করছে। ফলে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে খোলা-বাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রির মূল লক্ষ্য ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এরই মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টিসিবির বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে। দোকানিরা লাইনে দাঁড়ানো নিম্নআয়ের মানুষের কাছ থেকে একটি- দুটি করে তেলের বোতল কেনার কথা দাবি করলেও অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, সিন্ডিকেটের লোকজন বড় চালানে এসব পণ্য ওইসব দোকানে বিক্রি করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ট্রাকসেলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের গোপন আঁতাত রয়েছে। এ ছাড়া ডিলাররাও অনেকে এই সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার সঙ্গে যুক্ত।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সময় দুর্নীতিবাজ অনেক ডিলার টিসিবির গোডাউন থেকে মাল কিনে নির্ধারিত স্পটে পৌঁছানোর আগেই রাস্তায় এর একটি অংশ দোকানিদের কাছে বিক্রি করে দিত। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ওঠার পর টিসিবি কর্তৃপক্ষ নজরদারি বাড়িয়েছে। ফলে এখন তারা বিকল্প পথ ধরেছে। সরেজমিন টিসিবির ট্রাকসেলের বিভিন্ন স্পটে খোঁজ নিয়ে এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনে তা বাইরে বিক্রির এক- একটি সিন্ডিকেটে ২০- ২৫ জন সদস্য রয়েছে। কোনো কোনো সিন্ডিকেটে এই সংখ্যা অর্ধ- শতাধিক।

এই চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে টিসিবির বিক্রয় প্রতিনিধিরা ট্রাক নির্ধারিত স্পটে না নিয়ে আশপাশের কোনো রাস্তায় এনে দাঁড় করাচ্ছে। সেখানে অল্প সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেটের সদস্য’রা লাইন তৈরি করে মোট পণ্যের এক তৃতীয়াংশ কিংবা বেশি অংশ দ্রম্নত কিনে নিচ্ছে। এরপর ওই ট্রাক নির্ধারিত স্পটে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেখানেও সিন্ডিকেটের সদস্য’রা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে আরও এক দফা পণ্য কিনছে। বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবির ট্রাকসেল ঘিরে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ সিন্ডিকেটের নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা রয়েছে। ফলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। সিন্ডিকেটের হোতাদের না চিনে তাদের অপতৎপরতায় বাধা দিতে গিয়ে অনেকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে।

মালিবাগে টিসিবির ট্রাকসেলের নির্ধারিত স্পটে সরেজমিন দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, পণ্য- ভর্তি ট্রাক আসার কিছুক্ষণ আগে ১০-১২ জন ব্যক্তি নিজেদের টিসিবির লোক পরিচয় দিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের লাইন সাজিয়ে দিচ্ছে। কেউ যাতে লাইন না ভাঙে কিংবা পেছন থেকে এসে সামনে এসে দাঁড়িয়ে না পড়ে তা তারা তদারকি করছে। কিন্তু ট্রাক আসার পর দেখা গেল, এতক্ষণ ধরে যারা সাধারণ ক্রেতাদের লাইন ঠিক করেছিলেন, তারাই সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে পড়েন।

এ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন হৈ- চৈ- শুরু করলে কয়েক জন যুবক সেখানে এগিয়ে আসেন। তারা নিজেদের সবাইকে হট্টগোল করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে কোনো ধরনের ‘সিন ক্রিয়েট’ করলে পণ্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন ওই যুবক’রা। এ সময় এই প্রতিবেদক এগিয়ে গিয়ে লাইনে ঢুকে পড়াদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আবল- তাবল কথা বলা শুরু করেন। তারা কখনো নিজেদের টিসিবির লোক, আবার কখনো ক্ষমতাসীন দলের কর্মী বলে পরিচয় দেন।

ট্রাকসেলের কর্মীরা জানান, তারা টিসিবির কর্মী কিনা, তা তারা জানেন না। এ সময় ঘটনাস্থলে টিসিবির এক কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলে ও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। বাইরের লোকজন নিজেদের টিসিবির লোক পরিচয় দিয়ে পরে এসে কীভাবে আগে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন,’এটা আমার দেখার বিষয় না। আমার দায়িত্ব হলো ট্রাকে ঠিকমতো পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা, সেটি দেখা।’ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের খপ্পর শুধু মালিবাগেই নয়, রাজধানীর মুগদা শ্যামপুর সবুজবাগ খিলগাঁও সূত্রাপুর যাত্রাবাড়ী সহ মহানগরীর প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে। তাদের টিসিবির লোকজনও সহায়তা করছে। টিসিবি কর্তৃপক্ষের দাবি, জনবল সংকটের কারণে তারা এসব অনিয়ম রোধ করতে পারছেন না। এসব নিয়ন্ত্রণে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন’কে অবহিত করা হয়েছে কিনা, তা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্টরা।

শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ বেগম জানান, তিনি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও টিসিবির ট্রাকের কাছে পৌঁছতে পারেননি। অথচ তার পরে আসা ৭-৮ জন যুবক’কে কয়েক দফা পণ্য কিনে নিয়ে যেতে দেখেছেন। তারা কিছু সময় পর ঘুরে ফিরে লাইনের সামনে এসে দাঁড়ালেও ট্রাকসেলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা তাদের কিছুই বলছেন না। বরং তাদের কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েই পণ্য দিয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেও কয়েকজন তাদের কাছ থেকে গালাগাল শুনেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকার একজন জানান, সেখানকার কয়েক জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী মিলে টিসিবির পণ্য কিনে দোকানে বিক্রির সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তারা ২০- ২৫ জন নারী- কিশোর ও যুবককে দৈনিক এক থেকে দেড়শ’ টাকা মজুরির চুক্তিতে ট্রাকসেলের লাইনে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন পণ্য সংগ্রহ করে।

পরে তা পাড়া- মহলস্নার দোকান গুলোতে বিক্রি করা হয়। তাদের লাইনের সামনে অংশে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য এই সিন্ডিকেটের কয়েক জন যুবক ট্রাকের আশপাশে অবস্থান করে। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও এতে কোনো লাভ হয়নি। এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পণ্য নিয়ে নেওয়ায় স্থানীয় নিম্নবিত্ত অনেক পরিবার ট্রাকসেলের মাল কিনতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

শ্যামপুরের বাসিন্দা হতদরিদ্র নূরজাহান বানু জানান, স্থানীয় একটি কিন্ডার- গার্টেন স্কুলে তিনি ঝাড়ুদারের কাজ করতেন।করোনা মহামারির মাঝামাঝিতে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি চরম অর্থকষ্টে পড়েন। কয়েকদিন আগে পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করার প্রস্তাব পান। নূরজাহান জানান, ট্রাকসেলের একই লাইন থেকে তিনি প্রতিদিন তিন থেকে চারবার পণ্য সংগ্রহ করে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেন। কাজ শেষে তিনি দেড়শ’ টাকা পান। তা দিয়ে তার সংসার চলছে।

অর্থনীতিবিদ’রা জানান, বাজারে জিনিসপত্রের দামের লাগাম টেনে ধরা না গেলে এভাবে টিসিবির ট্রাকসেলে কম দামে দু’চারটে পণ্য বিক্রি করে কোনো লাভ হবে না। এতে আগামী’তে অনিয়ম আরও বাড়বে। টিসিবির পণ্য কিনতে এখন মধ্যবিত্ত’রা লাইনে দাঁড়ালেও সামাজিক মানমর্যাদার ভয়ে তারা নানা অনিয়ম দেখেও এ নিয়ে উচ্চবাক্য করছেন না। তবে এ নিয়ে এক সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। চলমান.!

প্রিয় পাঠক পরবর্তীতে সিন্ডিকেটদের রূপরেখা নাম সহ উন্মোচন করা হবে এ নিয়ে আমাদের অনুসন্ধান চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category