পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালী জেলা রিটার্নিং অফিসার ও আপিলকারি কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন এবং ঋণ খেলাপির মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ’রা। এ ঘটনায় পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। এই রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ছড়িয়েছে শহরজুড়ে।
১৩ ফেব্রুয়ারি ৬জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ, তার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ ও স্ত্রী মার্জিয়া আক্তার মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। একই পরিবারের তিন জন একসঙ্গে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় সবার সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর বেরিয়ে আসে ঋণ খেলাপির তথ্য গোপনের বিষয়টি। এর আগুনে ঘি ঢালার মত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঋণ খেলাপির দায়ে আবুল কালাম আজাদ এবং ঋণের জামিনদার তার ভাই বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর সর্বশেষ চিঠি দেয় পদ্মা ব্যাংক।
এরপর আবুল কালাম আজাদ ও মহিউদ্দিন আহম্মেদের মনোনয়ন পত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেন অপর প্রার্থী ডা.শফিকুল ইসলাম। আবুল কালাম আজাদ ও মহিউদ্দিনের পক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানিতে লড়তে আনা হয় ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এমপি’কে। আপিল আদালতে দীর্ঘ শুনানী শেষে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা প্রধান জেলা প্রশাসক মো নূর কুতুবুল আলম।
কিন্তু ঋণ খেলাপি ও হলফনামায় তথ্য গোপনের গুরুতর এ অভিযোগের পরও আপিলে মনোনয়নপত্র বৈধতা ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হন আপিলকারীর আইনজীবী’রা।এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লড়বেন বলে জানান আপিলকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শওকত মৃধা। আবুল কালাম আজাদের হলফনামায় তিনি পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড পটুয়াখালী শাখায় ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গত ১৫ ফেব্রুয়ারি খেলাপি ঋণের ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করে পটুয়াখালী পদ্মা ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক একটি চিঠি দেয় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে।
ঋণ খেলাপি এবং হলফনামায় তথ্য গোপনের পরও আপিলকারী কর্তপক্ষ জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করায় তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার পক্ষপাতমূলক আচরণে সংক্ষুব্ধ মেয়র প্রার্থী ডা. মো. শফিকুল ইসলামের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন আবুল কালাম আজাদ।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যেহেতু ঋণের টাকা এখন পরিশোধ করছে, সেহেতু সমস্যা নেই। তবে প্রশ্ন হলো হলফনামায় তথ্য লুকানো এবং খেলাপি ঋণের টাকা যাচাই বাছাইয়ের পর পরিশোধ করলে তা বৈধ বলে গণ্য হবে কি? স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন আইন ২০০৯ এর ১৯(২) ধারা অনুযায়ী – ‘মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার তারিখে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে গৃহীত কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী রাখলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না।’ সেই হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর খেলাপি ঋণের টাকা পরিশোধ করলেও প্রার্থী হিসেবে যোগ্য হওয়ার কথা নয়।
আইনে আরও বলা হয়েছে- ‘প্রার্থী বা তাহার পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হন বা ইহার জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা পৌরসভার কোনো বিষয়ে তাহার কোনো প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকে, সেক্ষেত্রে তার প্রার্থিতা যোগ্য হবে না।
অথচ মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের মালিকানাধীন মেসার্স আবুল কালাম আজাদ ২০২০ সালের ৩ জামুয়ারী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে ctip প্রজেক্ট এর ৫কোটি ৮১ লাখ একটি সাইক্লোন সেন্টার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি করছেন। সেই হিসেবে আইন অনুযায়ী আবুল কালাম আজাদ এবং তার ভাই মহিউদ্দিন আহমেদ আহমেদ প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ের দিনই ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি পাওয়ায় বর্তমান মেয়রের স্ত্রী মার্জিয়া আক্তারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে আপিলেও বাতিল বলে গণ্য হয়। ব্যাংকের ঋণ খেলাপীর চিঠি ও হলফনামায় তথ্য গোপনের পরও আবুল কালাম আজাদ এবং মহিউদ্দিন আহম্মেদের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করায় জেলা প্রশাসক ও জেলার রিটার্নিং অফিসারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৯কোটি বা ২৪ কোটি টাকার কোন বিষয় না। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এফিডেভিট দিলে তার প্রার্থীতা বাদ। আর ঋনগ্রহীতার জামিনদারও যদি প্রার্থী হয়ে থাকে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাহলে তারও (জামিনদার) মনোনয়ন বাদ। এদের দুইজনের মনোনয়ন বৈধ হবার কোন সুযোগই নাই বলেও যুক্ত করেন এম সাখাওয়াত হোসেন।