• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া

সংবাদদাতা / ১০০ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই হিসাবে নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন থেকে চার মাস। বর্তমানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের যে অবস্থান তাতে নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এমন অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে ভিসা বিধিনিষেধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানে দায়ী ব্যক্তি বা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ শুরু করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরাও থাকবেন বলে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

তালিকায় কারা আছেন?

মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় কারা কারা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন, তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে মিলার বলেছেন, যারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে জানানো হবে। যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে সেসব ব্যক্তি তা তাদের পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও ভিসা নীতির আওতায় পড়তে পারেন।

তবে এ নিয়ে প্রশাসনসহ রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা চলছে। একান্ত আলাপে একে অপরকে প্রশ্ন করছেন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা। কেউ কেউ এই সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন- তাদের নামও শোনা যাচ্ছে।

বিশেষ করে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বা আছেন- অতিরিক্ত আইজি, ডিআইজি, রেঞ্জ ডিআইজি, র‌্যাব কর্মকর্তাসহ এমন একাধিক কর্মকর্তার নামও ভেতরে ভেতরে জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। অবসরে গেছেন, কিন্তু অতীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তারাও আছেন ভিসানীতির আওতায়।

নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরাও কি এই ভিসানীতির আওতায় আছেন? এ নিয়ে খোদ প্রশাসন ক্যাডারে কৌতূহল আছে।

কারা ভিসানীতির আওতায় চিহ্নিত হয়েছেন জানতে চাইলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘না, আমরা ভিসা বিধি-নিষেধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করব না। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ভিসার তথ্য-উপাত্তসংক্রান্ত রেকর্ড গোপনীয় বিষয়।

মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধের বড় একটা প্রভাব দেশের রাজনীতিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটি যে কেবল নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে তা নয় বরং ভাগ্য নির্ধারণ করবে। ক্ষমতাসীন দল যদি এটি উপলব্ধি করতে পারে তাহলে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে। এখন যা করার আমাদেরই করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে হবে।

এদিকে মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে উল্লেখ করে এর জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকেই দায়ী করছে বিএনপি। এ ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক ও লজ্জাকর মনে করলেও এর প্রভাব বিএনপির ওপর পড়বে না বলে দাবি করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মী নির্যাতন, গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রকম পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।

আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনে করছে এটা তাদের জন্য কোনো চাপ তৈরি করবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত থেকে বিএনপি সরে আসবে।

এদিকে সূত্রের তথ্য মতে, ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে শুধু সরকারি দল নয়, অস্বস্তিতে আছে বিএনপি ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। দলগুলোর নেতাদের মধ্যেও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় কারা কারা আছেন- তা নিয়ে নানান আলোচনা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...