• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন

হিট অ্যালার্টেও স্কুল খুলল, গরমের ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

Reporter Name / ১০ Time View
Update : রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

নিজস্ব  প্রতিবেদক: ঈদ ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এক মাসের বেশি ছুটির পর আবারও খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে পাঠদান। পাঠদানের সময় সুচি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে নতুন সময়। তবে সে সময়েও তীব্র গরমের ঝুঁকিতে শিক্ষাথীরা।অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত রুটিন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবে নতুন সময়ে অভ্যাস তৈরিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি পড়াশুনার সময় ও প্রাইভেট টিউশনের সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া দেশের তাপ প্রবাহের প্রকোপে সকাল ৯ টার পরই বাইরের তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে যায়। ফলে নতুন সময় অনুযায়ী পাঠদানেও ঝুঁকির বাইরে নয় শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থাই উত্তম বলছেন তারা

ফার্মগেট বটমলী হোম বালিকা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ম্যারানো মেরিন। নিয়মিত সকাল ১০ টায় স্কুলে আসে সে। প্রাত্যহিক অভ্যাস অনুযায়ী সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা ও রেডি হয়ে আসেন। তবে নতুন নিয়মে নিজেকে প্রস্তুত করতে প্রায় ৩৫ মিনিট দেড়ি হয়ে এই শিক্ষার্থীর। স্বাভাবিক ভাবে ঘুম অপূর্ণ থাকায় মাথা ব্যথার সমস্যায় ও পড়েছে বলে জানান মেরিনের মা মেরিনো লিনা। লিনা বলেন, আমাদের অভ্যাসগত কিছু দিক থাকে যা পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ পরিবর্তন করলেও বেশ কিছু জটিলতা থাকে খাপ খেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি।তিনি বলেন, সকাল ১০টা হলেই গরম আর সহ্য করা যায় না। বাচ্চাদের রক্ষার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা কোন ভাবেই তাদের উপকারে আসছে না। আবহাওয়া যতটা প্রখর হয়ে উঠেছে তাতে কোন ভাবেই সময় পরিবর্তন করে রক্ষা পাওয়া যাবেনা। এর জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করা প্রয়োজন।

নাখাল পাড়া প্রাইমারি স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা আমেনা খাতুন বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাপপ্রবাহ টা বেশি থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির যে কথাটা আমরা বলছি তা ঠেকানোর উপায় তাদের ঘরে রাখা। এ ক্ষেত্রে তাপপ্রবাহ যতদিন থাকে ততদিন তাদের অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থাই শ্রেয় মনে হয় হয় আমাদের।সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, সকালে নিয়মিত রুটিনে আমাদের একটা অভ্যাস হয়েছে। যেটা থেকে বের হয়ে নতুন সময় ঠিক রাখতে আজ কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে দুপুরের যে রোদ টা এটা থেকে মুক্তি মেলেনি। দেখছেন শরীর ঘেমে গেছে৷ এখন এমন অবস্থায় আমাদের অনলাইন ক্লাশ হলেই ভালো হতো সরকারের নতুন সময় অনুযায়ী এক পালায় (শিফটে) পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। আর দুই পালায় বিদ্যালয়গুলোয় প্রথম পালা সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় পালা সকাল পৌনে ১০টা থেকে থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।

শিফট পরিবর্তন করে কি শিশুদের গরম ও রোদ থেকে রক্ষা সম্ভব কিনা? এ প্রসঙ্গে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র তাপ প্রবাহে সব থেকে ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। অতিরিক্ত গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জন্ডিস পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া স্বাভাবিক ভাবে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, কানে ইনফেকশন, টনসিলাইটিস ও নিউমোনিয়াও দেখা দিতে পারে। প্রখর রোদে ত্বকে ফোসকা পড়া, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, ফাঙ্গাসের সংক্রমণ, ঘামাচি ও চুলকানি দেখা দিতে পারে। ফলে রোদ থেকে শিশুদের রক্ষাতে ঘরে থাকার পরামর্শ সকলের।

চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমান তাপমাত্রা একদমই অস্বাভাবিক শিশুদের জন্য। এর ফলে নানা ভাবে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে শিশুদের রাখা জরুরি। এবং গরম থেকে বাঁচতে পারিবারিক ভাবে সচেতনতা বাড়ানোর উচিত। তাই শিফট পরিবর্তন নয়, শিশু সুরক্ষায় নিরাপদ স্থানই নিশ্চিত প্রয়োজন।

আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ও অ্যাসোসিয়েট সাইন্টিস্ট ফারহানা আফরোজ বলেন, দিন দিন তাপ প্রবাহ বেড়ে চলছে৷ ফলে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ বিশেষ করে শিশুরা অতিরিক্ত ঝুঁকিতে পড়ছে। ফলে শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।তিনি বলেন, শিশুদের গরমের পাশাপাশি ধুলোবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বাহিরের খাবার ও পানি পান জরা থেকে বিরত রাখতে হবে। তীব্র গরমে অস্বস্তি থেকে শিশুরা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে। সকল ঝুঁকি এড়াতে দিনের বেলায় ঘরে থাকাই শ্রেয়।প্রসঙ্গত, ৩১ মার্চ থেকে দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত ২৮ দিন ধরে টানা তাপপ্রবাহ চলছে; যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটির পর আর স্কুল খোলেনি সরকার। অসহনীয় গরমের কারণে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।এই গরমে শিশুদের ‘অতি উচ্চ ঝুঁকির’ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফও।

Please Share This Post In Your Social Media


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category