• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারে নামছে বন্যার পানি

Reporter Name / ৩৭ Time View
Update : বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩

অনলাইন  ডেস্ক:

টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। তবে নামতে শুরু করেছে বন‌্যার পানি। জেলায় সবেচেয়ে বেশি প্লাবিত এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা। এই দুই উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ২৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১ থেকে ২ ফুট বন্যার পানি নেমে গেছে এবং পানি নামা চলমান বলে জানা গেছে।

চকরিয়া সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, প্লাবিত অঞ্চল থেকে ২ ফুটের মতো পানি কমেছে। তবে পানি কমলেও এসব অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এই মুহূর্তে তাদের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন। আমরা যতটুকু পারছি সহযোগিতা করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন বন্যা দুর্গতদের পাশে।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশের পাঠানো এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের ৯টি উপজেলার মধ্যে সকল উপজেলার কম-বেশি ইউনিয়ন পানিবন্দি রয়েছে। বিকেল পর্যন্ত ৬০ ইউনিয়নের পানিবন্দি থাকার তথ্য জেলা প্রশাসন পেয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরের ৫টি, রামুর ৩টি, ঈদগাঁওর ৫টি, চকরিয়ার ১৮টি, পেকুয়ার ৭টি, মহেশখালীর ৫টি, কুতুবদিয়ার ৬টি, উখিয়ার ৫টি, টেকনাফের ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এই ৯টি উপজেলার ২০৮ আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্য বলছে, বন্যার কারণে জেলায় ইতিমধ্যে দেড় কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে সড়ক, কালভার্ট, কাঁচারাস্তা সবচেয়ে বেশি। এদিকে, বন্যার কারণে মঙ্গলবার ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রামুতে পানিতে ডুবে এক শিশু এবং পেকুয়ায় সাপের কামড়ে এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন। এর আগে সোমবার পাহাড় ধসে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২ জন এবং চকরিয়ায় ৩ জনের মৃত্যু হয়। এদিকে, চকরিয়ার জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের ওপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বসতঘর তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো খাবার ছাড়া রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই গত দুইদিন ধরে।

চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামার বেঁড়িবাধটি ভেঙে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি লোকলয়ে প্রবেশ করে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিজ নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা পানি যাতে দ্রুত নেমে যায় সেজন্য কাজ করছেন। এছাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম ও কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের ইউনিয়নগুলো মাতামুহুরী নদীর সঙ্গে লাগোয়া। এজন্য পাহাড় থেকে নেমে ঢলের পানি আগে আঘাত আনে এসব ইউনিয়নগুলোতে। এই দুই ইউনিয়নে অধিকাংশ ঘর পানির নিচে। গত দুইদিন ধরে লোকজনের রান্না বন্ধ। শুধু শুকনো খাবার খেয়ে রয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বন্যাকবলিত প্রায় এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী প্রায় দেড় লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যাকবলিত মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদেরও বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, প্লাবিত অঞ্চলগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে, রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৩ হাজারের বেশি বসতবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। রামুতে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেস রিডার রুহুল আমিন জানান, বাঁকখালী নদীতে পানির বিপৎসীমার চিহ্ন ৫ দশমিক ২৮ মিটার, কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫ দশমিক ৬৮ মিটারে প্রবাহিত হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি নামতে শুরু করেছে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানিয়েছেন, ইউনিয়নের ৫ শতাধিক বসতবাড়ি পানির নিচে। এছাড়া অসংখ্য বসতঘর ও মাছের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের মনিরঝিল, বৈলতলা, চরপাড়া, গাছুয়াপাড়া, ডিককুল, ডেপারকুল, লামারপাড়াসহ আরও কয়েকটি গ্রাম পানিতে একাকার হয়ে গেছে। কয়েকটি বাড়ি থেকে পানিবন্দি অবস্থায় লোকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, পাহাড়ের উপরে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে ও সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হয়েছে।

চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার জানিয়েছেন, কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে ইউনিয়নের ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে নতুন চরপাড়া, ফুয়ারচর, নাসিরাপাড়া, পূর্ব মোহাম্মদ পুরা, উত্তর চাকমারকুল, পশ্চিম চাকমারকুল, আলী হোসেন সিকদারপাড়ার একাংশ, জালাইলতলীসহ বিভিন্নস্থানে লোকজন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর সময় পার করছেন। জারাইলতলী এলাকায় গাছ পড়ে একটি বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্গত লোকজনকে উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রীনা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির ফলে ইউনিয়নের ৫টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ২ শতাধিক বাড়ি পানির নিচে। পাহাড় ধস ও বন্যার ক্ষতি রোধে জনসাধারণকে সজাগ থাকার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও সদর, জালালাবাদ, পোকখালী, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন, কক্সবাজার সদরের পিএমখালী, খুরুশকুল, পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়ন, মহেশখালীর ৩ ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়া তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে প্রবল বর্ষণ ও পূর্ণিমার উচ্চ জোয়ার অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে উচ্চ জোয়ারের কারণে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্লাবিত এলাকায় ইতিমধ্যে ৫৮ টন চাল ও ৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সহায়তা দল কাজ করছে। প্লাবিত এলাকা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উদ্ধার তৎপরতাসহ সার্বিক সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড কাজ করছে।

Please Share This Post In Your Social Media


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category