• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

বাংলা ও বাঙালী সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেবার চেষ্টাকারীরা বারবার ব্যর্থ হয়েছে: রাষ্ট্রপতি

Reporter Name / ৪৯ Time View
Update : শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শরিফুল ইসলাম, পাবনা থেকে: রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, নৌকা- বাইচ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে লোক- সংস্কৃতির অমূল্য বহু উপাদান। এসব লোক- সংস্কৃতি সঠিক ভাবে লালন করা গেলে এগুলো বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।

ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেকেই বাঙালী সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেয়ার চেষ্টা করছে। যারা যারা এ অপচেষ্টা করেছে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাবনার সাঁথিয়ায় ইছামতি নদীতে নৌকা- বাইচের ফাইনাল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাঙালি জাতীয়তা বাদ থেকে বাঙালি সংস্কৃতির সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সত্তরের নির্বাচনে জয় ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক এ কথা বলতে কোনা দ্বিধা নাই। স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অর্থহীন।

তিনি বলেন, পাবনা জেলা বাঙালি লোক- সংস্কৃতির উর্বর ক্ষেত্র। এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির অনেক দিকপাল ও কীর্তি- মানের জন্ম এ জেলায়। আমরা আমাদের শিল্প- সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। নৌকা- বাইচ আমাদের এলাকায় তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও অমলিন।

বাংলার আকাশে বাতাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সাংস্কৃতিক উপাদান গুলো কে খুঁজে বের করতে হবে। এগুলোর সঠিক পরিচর্যা আমাদের সংস্কৃতিকে আরো অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ সময়ে আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের ঐতিহ্য।

ঈদ, পূজা, পার্বণ ও অন্যান্য সকল ধর্মীয় উৎসব এবং মৌসুমী ও ঋতু ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশ গ্রহণই আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশে পরিণত করেছে। বিশেষ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আমাদের যে কোন মূল্যে এগিয়ে নিতে হবে।

তথ্য প্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির বর্তমান যুগে দেশীয় লোক সংস্কৃতি সমূহ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এমতাবস্থায় নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি নৌকা বাইচ, পুতুল নাচ, জারি সারি, ভাওয়াইয়া গান, গ্রাম্য মেলা, নানাবিধ উৎসব ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতি জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশও এর বাইরে নয়, তবে বাংলাদেশ ইতো মধ্যে অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকা বেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। পাবনার উন্নয়নেও নতুন গতি এসেছে। ২০০৮ সালে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিনে কোন হাসপাতাল ছিল না।

সকালেই পাবনায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা করা হয়েছে। পাবনা থেকে রেল চলাচল এ মাসেই শুরু করার কথা থাকলে ও প্রশাসনিক ও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে অল্প- দিনের মধ্যে পাবনা থেকে রেল চলাচল শুরু হবে ইনশা আল্লাহ। এছাড়া পাবনার প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে।

উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়ন তখনই ফলপ্রসু হয় যখন এর সাথে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা থাকে। তাই পাবনার উন্নয়নের সকল কে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের কারণে আমরা বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারী হতে পারি। কিন্তু পাবনার উন্নয়নে আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো, এটাই জনগণের প্রত্যাশা।

ডেপুটি স্পীকার শামসুল হক টুকু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ফার্স্ট লেডী ড. রেবেকা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য দেন, সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ইছামতি নদীতে গত ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তাহব্যাপী নৌকা- বাইচের উদ্বোধন করা হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বাগচী চ্যালেঞ্জার্স নামের নৌকা চ্যাম্পিয়ন ও শারিরভিটা এক্সপ্রেস নৌকা রানার্স- আপ হয়। নৌকা- বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক নারী- পুরুষ দর্শকের ভীড় জমে।

Please Share This Post In Your Social Media


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category