• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

শাল্লায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ফাঁসানোর ছক সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু

Reporter Name / ১৮৭ Time View
Update : বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শাল্লায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা সেলিনা আকতারকে দুর্নীতিতে ফাঁসাতে মরিয়া ওই স্বাস্থ্য কমল্পেক্সের ভেতরের কিছু অসাধু কর্মচারী। এযেনো ঘরের শত্রু বিভীষণ। মাস তিনেক পূর্বে শাল্লায় স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডাঃ সেলিনা আকতার। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবার মান বাড়ানো, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে কঠোর হোন তিনি।

ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারীরা সঠিক ভাবে দায়িত্বপালন করছেন কিনা তাও সার্বক্ষণিক তদারকি করেন ডাঃ সেলিনা আকতার। কোয়াটার ও ডরমিটরি ভবনের জন্য নির্ধারিত ভাড়া দিতে বলেন ডাঃ সেলিনা আকতার। এতে কিছু কর্মচারী আপত্তি করেন। নিজেদের পছন্দমত কোয়াটার ব্যবহার করতে চান তারা। ভাড়ার কথা বলায় আরও মনঃক্ষুণ্ণ ওই কর্মকর্তার প্রতি।

কিন্তু উপজেলার ৫০শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সম্পূর্ণরূপে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তিনি আর তাতেই স্বার্থে আঘাত লাগে কিছু স্বাস্থ্যকর্মীর। ছক কষে ডাঃ সেলিনা আকতারকে দুর্নীতিতে ফাঁসানোর। ছক অনুযায়ী বিভিন্ন ভুয়া বিল ভাউচারে কৌশলে নেওয়া হয় ডাঃ সেলিনা আকতারের স্বাক্ষরও। পরে তা বিভিন্ন সংবাদকর্মীদের কাছে পাঠানো হয়। সংবাদের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে স্থানীয় বাসিন্দারা পাল্টাপাল্টি পক্ষে বিপক্ষে মানববন্ধনও করেন।

এমন ঘটনায় বিভ্রান্ত হন উপজেলার সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনার ঝড়। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে ৩সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে মোতাবেক ২৭ জুলাই বুধবার দুপুরে জেলা থেকে তদন্তে আসেন ৩সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।

এবিষয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে রোগীর সঙ্গে আসা দামপুর মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মতিউর রহমানসহ অন্যান্য রোগীরা বলেন আগের তুলনায় ডাক্তার, নার্সরা এখন বেশি বেশি রোগীর খোঁজ খবর নেন। সেবার মানও ভাল বলে জানান চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারের আর এন ফার্মেসীর ওষুধ ক্রয়ের ৫০হাজার টাকার দু’টি বিল পাওয়া যায়। তাতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। তবে আর এন ফার্মেসীর স্বাত্বাধিকারী মনোহর রায় বলেন এগুলো নকল ভাউচার। কেউ হয়তো আমার ফার্মেসীর মেমু ব্যবহার করে নকল করেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ সেলিনা আকতার বলেন আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। ভাউচারগুলো অফিস সহকারী প্রধান তৈরি করেন। আমি শুধু স্বাক্ষর দেই। আমি নতুন এসেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা যাতে সঠিক সেবা পান ও হাসপাতালের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমি বদ্ধপরিকর। ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্টাফদের ডিউটি সঠিকভাবে পালন করার ক্ষেত্রে আমি একটু কঠোর।

অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান। আমার অপরাধ মনে হয় এখানেই। বিল ভাউচারে কোন অনিয়ম হলে জবাব দিবেন অফিস সহকারী প্রধান নিশিকান্ত দাস। কোনটা আসল কোনটা নকল সেটা তিনি জানেন। কেননা, বিল ভাউচার তৈরি করেন নিশিকান্ত তালুকদার । নিজের সুবিধা মত ডরমিটরিতে বসবাস করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেখানে আমার দু’জন গর্ভবতী নার্স থাকেন। তিনি তখন ভীষণ ক্ষেপে গেছেন। এমনকি হুমকি দিয়েছেন বাচ্চাসহ নার্স কীভাবে থাকেন তিনি তা দেখে নেবেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে ওই নার্স বলেছেন হ্যাঁ, নিশিকান্ত তালুকদার আমাকে হুমকি দিয়েছেন। ডাঃ সেলিনা আকতার আরও বলেছেন ৩জন সংবাদকর্মী আমার স্টাফের কাছে চাঁদা চেয়েছেন। চাঁদা না দিলে সংবাদ করার হুমকি দিয়েছেন তারা। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। সমাজে আমার সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এবিষয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি।

অফিস সহকারী প্রধান নিশিকান্ত তালুকদার বলেন আমি বিল ভাউচার তৈরি করিনি। জগন্নাথ রায় ও অসীত বরণ দাস এসব তৈরি করেছেন। স্টোর কিপার জগন্নাথ রায় বলেন আমি এসব তৈরি করিনি। উপজেলা কমল্পেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক অসীত বরণ দাস বলেন বিল ভাউচার তৈরি করেন অফিস প্রধান নিশিকান্ত তালুকদার। নিশিকান্ত তালুকদারের বিরুদ্ধে এরপূর্বেও নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রভাব খাটিয়ে নিজের ভাইকে হাসপাতালে চাকুরী দিয়েছেন। ভুয়া বিল ভাউচারসহ নানা অঅনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

এরপরও যুগের পর যুগ নিজ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দাপটের সঙ্গে চাকুরী করছেন তিনি। অনেকই অভিযোগ করে বলেছেন ডাঃ সেলিনা আকতারকে হেয় প্রতিপন্ন করার মূল ষড়যন্ত্রকারী নিশিকান্ত তালুকদার। তবে নিশিকান্ত তালুকদার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জেলার সিভিল সার্জন আহমেদ হোসেন শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে এখন কোন দুর্নীতি হয়নি। স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা সেলিনা আকতারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, তিনি সেই দুর্নীতিতে যুক্ত নন। আগের তুলনায় চিকিৎসা সেবার মানও বেড়েছে উপজেলায়। তবে এখানে প্রক্রিয়াগত কারণে কিছুটা ভুল-ত্রুটি হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। এক্ষেত্রে তদন্ত চলমান রয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন আহমেদ হোসেন।#

Please Share This Post In Your Social Media


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category