• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

ডিসি-এসপিদের ‘নজরদারিতে’ রাখছে ইসি

Reporter Name / ১৫৫ Time View
Update : সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধিঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে তিন জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), দুই বিভাগীয় কমিশনার ও পাঁচ জেলার এসপি পদে পরিবর্তন করেছে সরকার। দেশব্যাপী আরও ডিসি- এসপিদের নিয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্তে নেমেছে ইসি। পাশাপাশি ‘নজরদারিতেও’ রাখা হচ্ছে তাদের। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একাধিক প্রার্থী ডিসি- এসপিদের নামে অভিযোগ দিয়েছেন।

ময়মনসিংহ- ৭ আসন ত্রিশালের স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী আলহাজ্ব এ বি এম আনিছুজ্জামান আনিছ ও এক সাংবাদিকদের পরিবার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক সপ্তাহ ধরেই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনৈতিক স্থানীয় একটি চক্র। এবিষয়ে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ৭ দিন আগে। সাবেক ওসি বর্তমানে কোতোয়ালি মডেল থানায় কর্মরত মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন মামলা আমলে না নিয়ে আরও হয়রানি করছেন বলেও জানাগেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় এমপির পক্ষে দীর্ঘদিন একক কাজ করেছেন সাবেক ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন এবং স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী ও তার লোকজনকে শায়েস্তা করতে বিভিন্ন মামলার আসামীও করেছেন। এ কারণে অভিযোগ আমলে নেয়নি ওসি। পরবর্তীতে অভিযোগকারী জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহম্মেদ ভুইয়াকে টেলিফোনে বিস্তারিত জানালেও কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে
বরং বিভিন্ন সময় টালবাহানা করেছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিযোগকারী, আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানাগেছে।

জানা গেছে, অনেক অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে ইসি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসির তদন্তে যদি প্রমাণ হয়এসপি- ডিসি কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করছেন, তবে বদলি করা হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাঠে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, ডিসি-এসপিদের এমন কোনো আচরণ দেখা গেলে দ্রুত সময়ে বদলি করা হবে।

এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত বিষয়টি চলমান রাখতে চায় ইসি। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দৈনিক প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, ডিসি- এসপিদের বদলি এখন নতুন কিছু না, চলমান প্রক্রিয়া। কমিশনের চোখে নিরপেক্ষ না হলে বা কোনো প্রার্থীর পক্ষে- বিপক্ষে কাজ করলেই প্রত্যাহার করা হবে। কোনো ডিসি- এসপির বিপক্ষে কোনো প্রার্থী অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করবো। তদন্তে যদি প্রমাণ হয় ওই ডিসি- এসপি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন, তাহলে বদলি করা হবে।

তদন্তে প্রমাণ হলেই আমরা ব্যবস্থা নেবো। ইসি জানায়, যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বদলির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে লিখিত আবেদন করেছেন মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এ বিষয়ে তদন্ত করছে ইসি। এমন একাধিক এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে। তাদের বিষয়েও তদন্তে নেমেছে ইসি। মাঠপ্রশাসন ও পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পৃথক চিঠি দেয় কমিশন।

জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের বেশিরভাগই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। মাঠপ্রশাসন ও পুলিশের অনেক কর্মকর্তা একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে অনেকের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িয়েছেন। এ অবস্থায় প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশন এ পদেক্ষপ নিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের জেলার এসপিকে বদলি করা হয়।

মেহেরপুরের সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ সুপার মো. রাফিউল আলম গত ২৯ মাস ধরে মেহেরপুরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই ভাবে সামনে একাধিক মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর এলাকার এসপি-ডিসিকে বদলি করা হতে পারে বলে জানায় ইসি। ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান জেলায় জেলায় গিয়ে মাঠপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এসব বৈঠকে ইউএনও এবং থানার ওসিদেরও ডাকা হয়। চার কমিশনার জেলায় জেলায় সফরে গিয়ে মাঠপ্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষপাতের অভিযোগ পান। বিষয়টি নিয়ে কমিশনে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন তারা। সেখানে বড় ধরনের রদবদলের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। এরই মধ্যে বরিশাল ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, পাঁচজন এসপি, তিনজন ওসি ও একজন জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার সকালে ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনার আলাদা আলাদা চিঠি জননিরাপত্তা বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে দুই পুলিশ কমিশনারসহ হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক এবং মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর ও শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও (ওসি) প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের স্থলে উপযুক্ত কর্মকর্তাকে পদায়ন করার জন্য বলেছে ইসি। ইসির কর্মকর্তা বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৪৪ (ঙ) ধারায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকারি কর্মকর্তাদের বদলির এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত হয়। ওই ধারা অনুযায়ী, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের কোনো বিভাগ বা কোনো সংস্থার যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিতে পারে ইসি।

নির্দেশনা পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা ওই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, চার কমিশনার মাঠপর্যায়ে সফরকালে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পেয়েছেন। ওই তালিকায় ডিসি- এসপিরাও রয়েছেন।তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। তবে তাদের নামের তালিকা পাওয়া যায়নি। এছাড়া নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বদলি এবং শাস্তির মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে।

Please Share This Post In Your Social Media


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category